সহ-শিক্ষামূলক কার্যক্রম: পিছিয়ে যাচ্ছো নাতো তুমি??

আব্দুর রহমান

আব্দুর রহমান

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

কো-কারিকুলার অ্যাক্টিভিটি পরিভাষাটির সাথে আমরা সকলেই কমবেশি পরিচিত। বাংলায় যাকে আমরা বলি সহ-শিক্ষা কার্যক্রম। অন্যভাবে বলা যায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একাডেমিক পড়াশোনার বাহিরে গিয়ে শিক্ষার্থীরা নিজেদের জ্ঞান, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও মানসিকতার বিকাশ লাভের লক্ষ্যে যেসব শিক্ষামূলক কাজ করে থাকে সেগুলোকেই মূলত এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটি বা কো-কারিকুলার অ্যাকটিভিটি বলা হয়। বর্তমানে আমাদের দেশের ভালো ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নানামুখী সহ-শিক্ষামূলক কার্যক্রম লক্ষণীয়, যা ক্লাব এক্টিভিটি নামেও পরিচিত। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো_ বিতর্ক, সায়েন্স ফেস্টিভ্যাল, ছবি আঁকা, গান, ফটোগ্রাফি, আই.টি, স্কাউট, বি.এন.সি.সি, কুইজ ক্লাব, ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব, স্পোর্টস, কবিতা আবৃত্তি, নাচ, কেইস কম্পিটিশন, লেখালেখি, ম্যাথ, ফিজিক্স, বায়োলজি বা ইনফরমেটিক্স অলিম্পিয়াড ইত্যাদি। এছাড়াও সমাজসেবামূলক স্বেচ্ছাসেবক কার্যক্রমও এই এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিসের অন্তর্ভুক্ত। যেমন: রক্তদান, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, স্বাক্ষরতা অভিযান, স্বাস্থ্য সচেতনতা ক্যাম্পেইন করা।

Damian Dreamers

এই কাজগুলো যে কারো কাছেই প্রশংসনীয়, তবুও অনেক শিক্ষার্থীরা এসব কাজে অংশগ্রহণ করে না এবং অনেক অভিভাবক এই কাজগুলোর প্রতি তাদের সন্তানদেরকে নিরুৎসাহিত করে থাকে। তার প্রধানতম কারণ হলো এসব কার্যক্রম তাদের পরীক্ষার ফলাফলে খুব একটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলে না বরং ক্ষেত্রবিশেষে নেতিবাচক প্রভাব লক্ষণীয়। মূলত এ কারণেই, আমাদের দেশে সহ-শিক্ষামূলক কার্যক্রমের প্রতি এখনো খুব বেশি গুরুত্বারোপ করা হয় না। কেউ যদি একাডেমিক সিলেবাসভুক্ত বিষয়াবলিতে দক্ষতার পাশাপাশি অন্য দুই-একটা কাজেও দক্ষ হয়, তাদের নিয়ে খুব গর্ব করা হয় সবার নিকট তাদের গুণগান করা হয়। কিন্তু কেউ যদি মূল সিলেবাসের বাইরে শুধু এক্সট্রা কারিকুলারেই বেশি পারদর্শী হয় , তাহলে সমাজে তাকে বাঁকা চোখে দেখা হয় এমনকি পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তাকে চরম অবমূল্যায়ন করা হয়ে থাকে । নাক সিঁটকে অনেকে বলে, “এগুলোতে ভালো করে কী হবে, মূল পরীক্ষায় তো ভালো করতে পারোনি!”

কলেজ নির্বাচনে যে ব্যাপারগুলি অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে

আমাদের দেশের এমন অপরিণত শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি লক্ষ্য করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক জুরানা আজিজ বলেছেন_“আমাদের বাবা-মায়েরা এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটির গুরুত্ব অনুধাবন করেন না, আর তাই এগুলোর জন্য সন্তানদেরকে উদ্বুদ্ধও করেন না। তাদের মূল ফোকাস থাকে ক্লাসে ফার্স্ট হওয়ার প্রতিযোগিতায়। একই কাজ করে স্কুলগুলোও, যেখানে শিক্ষার্থীদেরকে পরীক্ষা নিয়ে অতিরিক্ত চাপ দেয়া হয়, এবং স্কুলে এক্সট্রা কারিকুলার অনুশীলন করার সুযোগটুকুও দেয়া হয় না। এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটি পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত তহবিল গঠন করা হয় না, অথচ স্কুলে এগুলো অব্যাহত রাখার জন্য লজিস্টিক সাপোর্ট খুব জরুরি।”

আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটির প্রতি যথেষ্ট গুরুত্ব না দেয়ার কারণটি একটি চক্রের মতো। অভিভাবকরা এগুলো নিয়ে মাথা ঘামান না, তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষও এগুলোকে গুরুত্ব দেয় না, ফলে অধিকাংশ শিক্ষার্থীই এগুলোর মাধ্যমে খুব বড় কোনো সাফল্য পায় না যা তাদের সামগ্রিক ক্যারিয়ারে অবদান রাখবে। এই কারণেই এক্সট্রা কারিকুলারের গুরুত্ব ক্রমশ তলানিতে এসে ঠেকছে। অথচ বাস্তবে কিন্তু এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য অসীম। এই তাৎপর্য না জানা ও গুরুত্ব না বুঝার কারণেই আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা এসব কার্যক্রমে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করছে না, অভিভাবকরা শৈশব থেকে এমন কাজের প্রতি উৎসাহিত করছে না এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষও সহ-শিক্ষা কার্যক্রমের প্রতি শিথিলতা প্রদর্শন করছে। চলুন জেনে নিই একজন শিক্ষার্থীকে সহ-শিক্ষামূলক কার্যক্রম কীভাবে সবার চেয়ে এগিয়ে রাখতে পারে।

কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি

এটি এক্সট্রা কারিকুলারের সবচেয়ে ইতিবাচক দিক। যখন শিক্ষার্থীরা সিলেবাসের বাইরেও নানামুখী সৃজনশীল কাজে নিজেদের যুক্ত করে, তখন ওইসব কাজে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। আর আমরা সবাই জানি ও বিশ্বাস করি, আজকের দিনে দক্ষতার উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। যে যত বেশি দক্ষ, পরিবার, সমাজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্রে সর্বত্রই তার মূল্যায়ন তত বেশি! তাই শিক্ষাজীবন শেষে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য উঠেপড়ে লাগার চেয়ে, শৈশব থেকেই দক্ষতা বৃদ্ধির চর্চা চালানো ঢের বেশি বুদ্ধিমানের কাজ।

লিডারশিপ কোয়ালিটি তৈরি

আমরা সবাই চাই পরিবারে, সমাজে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, বন্ধু সার্কেলে, কর্মক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিতে। সবাই আমার আদেশ মেনে চলবে, আমাকে শ্রদ্ধা করবে, আমাকে সর্বত্রই সমীহ করে চলবে এমনটা সবাই প্রত্যাশা করে, কিন্তু নেতৃত্বের গুণাবলি সবার মাঝে থাকে না। কারণ এটি মানুষের জন্মগত কোনো গুণ নয় বরং জীবনসংগ্রামের মাধ্যমে ধীরে ধীরে এটি অর্জন করে নিতে হয়। একজন শিক্ষার্থী যদি তার শৈশব থেকেই কোনো ক্লাব এক্টিভিটির সাথে সংযুক্ত থাকে তাহলে সে একটি লিডারশিপ চেইনের মাধ্যমে নেতৃত্বের গুণাবলি অর্জন করবে। সিনিয়র মেন্টর এর নিকট শেখা এবং অধস্তনকে শেখানোর মাধ্যমেই নেতৃত্বের সর্বোৎকৃষ্ট গুণাবলি সে নিজের মধ্যে তৈরি করতে পারবে।

সৃজনশীলতা বৃদ্ধি

শিক্ষার্থীরা সিলেবাস অনুযায়ী পাঠ্যপুস্তকের যেসব বিষয়বস্তু শেখে, সেগুলোর গুরুত্ব অনস্বীকার্য। কিন্তু তারপরও, দিনশেষে সেগুলো কিন্তু বিবেচিত হয় ‘পুথিগত বিদ্যা’ হিসেবেই। সেই বিদ্যা নির্দিষ্ট বিষয়ে শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক ধারণাটুকু দিতে পারে শুধু। সেই ধারণাকে বাস্তবে কাজে লাগানোর জন্য তাদের প্রয়োজন নিজস্ব সৃজনশীলতা। সেই সৃজনশীলতার চর্চাই তারা করতে পারে এক্সট্রা কারিকুলার বা ক্লাব এক্টিভিটির মাধ্যমে। আর একজন শিক্ষার্থীর সৃজনশীলতার ধরন থেকেও আঁচ করা যায়, জীবনে কোন সেক্টরে কাজ করলে সে সর্বোচ্চ সফলতা অর্জন করতে পারবে।

সুবক্তা হওয়া

বাকপটুতা একজন মানুষের অনেক বড় গুণ। বক্তব্য দেওয়া কিংবা গুছিয়ে নিজের মনের ভাব প্রকাশ করতে পারা অনেক বড় একটি শিল্প। একজন মানুষ কীভাবে কথা বলে তার উপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠে তার ব্যক্তিত্ব। ব্যক্তির উপস্থাপন কৌশল কতটা সুন্দর তার প্রতি লক্ষ্য করেই মানুষ তার কথা গ্রহণ করে অথবা বর্জন করে। বলা হয়ে থাকে, “ব্যক্তির কথা তার জ্ঞানের মাপকাঠি”। একজন শিক্ষার্থী যদি নিয়মিত ডিবেট করে অথবা ক্লাব পরিচালনা করে তাহলে অবশ্যই তার ভাষা শৈলী হবে খুবই মাধুর্যপূর্ণ এবং শব্দের গাঁথুনি হবে হৃদয়গ্রাহী ও প্রাঞ্জল।

মানসিক বিকাশ

শুধু পড়াশোনা করলেই শিশুর মানসিক বিকাশ হয় না। ছোটবেলা থেকেই যদি তাকে শুধু পড়াশোনা করতেই চাপ প্রয়োগ করা হয়, তাহলে তা শিশুর মনের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। যেহেতু সবসময় পড়াশোনা করা কোনো আনন্দময় অভিজ্ঞতা নয়, বরং খুবই বিরক্তিকর, তাই ক্রমাগত এই বিরক্তির উদ্রেক ঘটতে ঘটতে একসময় শিশু জীবনের উপরই অতিষ্ঠ হয়ে উঠতে পারে। যে বয়সটায় তার মন হওয়ার কথা রঙিন ও স্বপ্নময়, সেই বয়সেই যদি জীবনের প্রতি তার তিক্ততা সৃষ্টি হয় তবে ফুল ফোটার আগেই নষ্ট হয়ে যাবে। তাই শিশুকে স্পোর্টস ও সহ-শিক্ষামূলক কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট করার মাধ্যমে তার স্বপ্নগুলোকে প্রস্ফুটিত করার সুযোগ করে দিতে হবে।

অভিজ্ঞতা লাভ

যেকোনো কাজ করা মানেই হলো অভিজ্ঞতা লাভ। অভিজ্ঞতা জীবনের একটি অতি-গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। ধরুন, একটি শিশু টেলিভিশনে ক্রিকেট খেলা দেখল এবং তার উর্বর মস্তিষ্ক খুব সহজেই ক্রিকেট খেলার যাবতীয় কলাকৌশল আয়ত্ত করে ফেলল। কিন্তু তাহলেই কি বলা যাবে যে সে ক্রিকেট খেলায় দক্ষ? মোটেই না। কোনো কাজ কীভাবে করতে হয় তা জানা এক জিনিস, আর নিজে সেটি করে দেখানো অন্য জিনিস। শিশুটি তখনই ক্রিকেট খেলা প্রকৃত অর্থে শিখতে পেরেছে বলে দাবি করা যাবে, যখন সে নিজে মাঠে গিয়ে ব্যাট ধরবে, বল হাতে দৌড়াবে, ঝাঁপিয়ে পড়বে অন্যের চার-ছয় আটকাতে। কারণ তখন তার নিজের অভিজ্ঞতা হবে খেলাটির ব্যাপারে। পুথিগত বিদ্যা অর্জনের সাথে অভিজ্ঞতার কোনো সম্পর্ক নেই বরং মাঠপর্যায়ে সহ-শিক্ষামূলক কাজের সাথে সংশ্লিষ্টতার মাধ্যমেই অর্জিত হয় প্রকৃত অভিজ্ঞতা।

সামাজিকীকরণ

একটি শিশুর কেবল পাঠ্যপুস্তকের জগতে ডুবে থাকলেই চলে না। তাকে সামাজিকও হতে হয়। আর সেই সামাজিকীকরণ ত্বরান্বিত হয় শিশুর এক্সট্রা কারিকুলারের মাধ্যমে। কেননা তখন সে আর শ্রেণিকক্ষের গণ্ডিতে আবদ্ধ থাকে না। বিভিন্ন কাজ করার মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে বাইরের দুনিয়ার সাথেও সে পরিচিত হয়, নানাজনের সাথে আলাপ-পরিচয় হয়, একই ধরনের শখ বা ভালোলাগা থাকায় পারস্পরিক বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে, সমাজের দশজনের সাথে ওঠা-বসার মাধ্যমেই সমাজে তার একটি সার্কেল গড়ে ওঠে।

দলগত কাজের শিক্ষা

সামাজিকীকরণের পথ ধরেই আসে দলীয় কাজের শিক্ষা। পড়াশোনা করাটা মূলত ব্যক্তিগত কাজ, যেহেতু অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই এখনো দলগত শিক্ষাকে গুরুত্ব দেয় না। ফলে শুধু পড়াশোনা করেই শিক্ষার্থীদের দলীয় কাজের অভিজ্ঞতা হয় না। অথচ বাস্তব জীবনে চলার পথে তো তাদেরকে অনেকে মিলে দলবদ্ধ হয়েই কাজ করতে হয়। সেখানে কেউ নেতৃত্ব দেয়, কেউ বা আবার নেতার অধীনে শৃঙ্খলিত ও নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে কাজ করে। এই যে নেতৃত্বের গুণাবলি কিংবা নিয়মশৃঙ্খলা মেনে চলার শিক্ষা, তা অর্জন করা যায় এক্সট্রা কারিকুলার বা ক্লাব এক্টিভিটির মাধ্যমেই।

সময়ের সদ্ব্যবহার

অনেক অভিভাবকই মনে করেন, পড়াশোনার বাইরে অন্য কিছু করা বোধহয় সময় নষ্ট। তা কিন্তু খুবই ভুল। বরং একটি শিশু যদি সারাদিন পড়াশোনা নিয়েই ব্যস্ত থাকে, তবে আদতে সে খুব বেশি কাজ করছে না। সারাদিনে ২৪ ঘণ্টা সময় হলেও, সেই সময়ের সবটা খাওয়া-ঘুমসহ অন্যান্য আবশ্যক কাজের বাইরে ব্যয় হচ্ছে কেবল পড়াশোনাতেই। অথচ এক্সট্রা কারিকুলারে শিশুকে উৎসাহিত করা হলে, তার জীবনের সোনালি সময়গুলোর যথাযথ সদ্ব্যবহার করা যাবে। তাছাড়া তার মধ্যে সময় ব্যবস্থাপনার গুণাবলিও বিকশিত হবে। অর্থাৎ সে বুঝতে পারবে, কোন কাজের পেছনে কতটা সময় খরচ করা দরকার।

সি.ভি ভারী করা

এখন কিন্তু আর সে দিন নেই যে শুধু একাডেমিক ফলাফলই কারো খুব ভালো কোনো চাকরি লাভ নিশ্চিত করে দেবে। চাকরিদাতারা এখন চাকরিপ্রার্থীর সিভিও খুব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেন যে তার পড়াশোনার বাইরেও অন্য কী কী গুণ রয়েছে। হয়ত সেসব গুণ তার কাজের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত নয়, কিন্তু তাতে কী! এসব গুণ থাকা কিন্তু চাকরিপ্রার্থীর মধ্যে উপরিউক্ত গুণাবলির উপস্থিতিও নিশ্চিত করে। অর্থাৎ চাকরিদাতারা বুঝতে পারেন, এই শিক্ষার্থী কেবল শিক্ষাগত দিক দিয়েই দক্ষ নয়, বরং সে মানসিকভাবে শক্তিশালী, দলবদ্ধ কাজে পারদর্শী, সৃজনশীলতার অধিকারী, সামাজিক, সময়নিষ্ঠ ইত্যাদি। এখন ভেবে দেখুন, একটি ছেলের একাডেমিক ফলাফল হয়ত তুলনামূলকভাবে কম ভালো, কিন্তু তার মধ্যে এই অতিরিক্ত গুণাবলি রয়েছে। অপরদিকে সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা ছেলেটির মধ্যে অন্য কোনো গুণাবলিই নেই। তাহলে চাকরি লাভের সম্ভাবনা কার বেশি?

বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ

 বাংলাদেশের শিক্ষার মানের সাথে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর শিক্ষার মানের আকাশ-পাতাল তফাত। তাহলে শুধু শিক্ষাগত যোগ্যতাই কি বিদেশের ভালো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সুযোগ ও স্কলারশিপ প্রাপ্তির জন্য যথেষ্ট? মোটেই না। বরং চাকরির মতো এক্ষেত্রেও অন্যান্য দক্ষতা অতি জরুরি। তাছাড়া চিন্তা করে দেখুন, বিদেশে গিয়ে একজন শিক্ষার্থী কিন্তু খুব সহজে মানিয়ে নিতে পারবে তখন, যদি না শ্রেণিকক্ষের বাইরেও অন্য নানা ক্ষেত্রে সে নিজেকে মেলে ধরার সুযোগ পায়, সামাজিকীকরণ করতে পারে, এবং নিজের দক্ষতা অন্যদের সামনে মেলে ধরে তার ব্যাপারে সবাইকে আকৃষ্ট করতে পারে। এছাড়াও বিভিন্ন সহ-শিক্ষামূলক কাজের উপর অনেকগুলো ইন্টারন্যাশনাল কম্পিটিশন কিংবা কনফারেন্সে অংশগ্রহণের সুযোগ তো থাকছেই।

সুতরাং এখন নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, কেন সিলেবাসের পড়ার পাশাপাশি এক্সট্রা কারিকুলারের প্রয়োজনীয়তাও অপরিসীম? যেসব অভিভাবক ভাবতেন এক্সট্রা কারিকুলার আপনার সন্তানদের ক্যারিয়ার গঠনে খুব একটা সহায়ক হবে না, তারা নিশ্চয়ই আগে বিষয়টিকে এভাবে তলিয়ে দেখেননি। তাছাড়া অনেক শিক্ষার্থীও হয়ত ইতঃপূর্বে এক্সট্রা কারিকুলারের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে এগুলোর ব্যাপারে নিজে থেকে উদ্যোগী হয়নি। আর বলাই বাহুল্য, অভিভাবক-শিক্ষার্থীদের ঔদাসীন্যের ফলেই বাণিজ্যনির্ভর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ক্রমশ এক্সট্রা কারিকুলারের আয়োজন থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।

তাই যেমনটি আগেই বলছিলাম, সচেতনতা জরুরি সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষেরই। কেবল তাহলেই দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় এক্সট্রা কারিকুলারের গুরুত্ব বৃদ্ধির মাধ্যমে একটি গঠনমূলক পরিবর্তন আনা সম্ভব। আর হ্যাঁ, এক্ষেত্রে দেশের শিক্ষাব্যবস্থার রূপরেখা প্রণয়নকারীদের তথা সরাসরি সরকারের পক্ষ থেকেও, এক্সট্রা কারিকুলারের ব্যাপারে আন্তরিক হওয়া, ক্ষেত্রবিশেষে কিছু এক্সট্রা কারিকুলারকে বাধ্যতামূলক করে দেয়াটা খুব প্রয়োজন। কেবল তাহলেই একুশ শতকের চ্যালেঞ্জের সাথে তাল মিলিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারবে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা। অর্জিত হবে ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অনুযায়ী দেশে মানসম্মত শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্ন।

এখান থেকে আরো পড়ো

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top