নটরডেম কলেজের স্টুডেন্টদের জন্য সেরা হোস্টেল কোনটি?

আব্দুল্লাহ আল বুখারী

আব্দুল্লাহ আল বুখারী

সাবেক নটরডেমিয়ান

নটরডেম কলেজ বাংলাদেশের সেরা কলেজ গুলোর একটি, তাতে কোন সন্দেহ নেই। দেশের নানান প্রান্ত থেকে, বিভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে ছাত্ররা এখানে পড়তে আসে। আসলে শুধু ‘পড়তে আসে’ কথাটা বলা সঠিক হবে না। নটরডেম কলেজ শুধু যে একজন ছাত্রকে ভাল করে পড়িয়ে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করিয়ে দেয়, ব্যপারটা মোটেও এমন নয়। নটরডেম কলেজ আসলে দেড় বছরে একটা মানুষের জীবনের বাকিটা পথ চলার জন্য যে জ্বালানীটুকু দরকার, তার ও যোগান দেয়। তাই একে শুধু কলেজ বলাটা ভুল হবে আমার মতে।

নটরডেম কলেজে কেন পড়বো?‘ নটরডেম এডমিশন হেল্প গ্রুপগুলোতে একটু খোঁজ করলেই উত্তর পেয়ে যাবেন। তাছাড়া নটরডেম থেকে পড়েছেন, এমন কোন সিনিয়র বড়ভাই বা অন্য কোন আত্মীয়ের কাছ থেকেও জেনে নিতে পারেন। আর মূল কথা হল, নটরডেম কলেজে পড়ার জন্য কারণের ফর্দ করে পোষাবে না। একবার এলেই বুঝে যাবেন

যাই হোক, ঢাকার বাইরে থেকে যারা আসেন নটরডেমে পড়তে, তাদের বেশিরভাগ ছাত্রই আরামবাগ, ফকিরেরপুল, এজিবি কলোনি, রেল কলোনি, জসীমউদ্দিন রোড, শাহজাহানপুর ও কমলাপুর সহ এর আশেপাশে নানান এলাকায় হোস্টেলে থাকেন।
 আমি যখন ২০১৫ সালে নটরডেমে পড়েছি, আরামবাগে হোস্টেলেই থেকেছি।

অলিগলিতে অসংখ্য হোস্টেল আছে আরামবাগ জুড়ে। নিউক্লিয়াস, উদয়ন, প্রভাতফেরী,ডায়মন্ড , মৈত্রী, ধানসিঁড়ি,অনির্বাণ ,সোনালী,রংধনু প্রজ্ঞা ,নীহারিকা,পাইয়োনিয়ার  ইত্যাদি ইত্যাদি। কিছু হোস্টেল আছে এলিট, মানে অনেক লাক্সারিয়াস। এসি, আইপিএস, সিংগেল রুম, এটাচটড বাথ, বারান্দা, পারসোনাল ওয়াইফাই ইত্যাদি। কিছু হোস্টেল আছে যেখানে সবার জন্যই সব রকমের সিট আছে। অর্থাৎ বিত্ত বিবেচনায় সবাই এক ছাদের নিচেই থাকে আরকি৷ আর এছাড়াও কিছু এভারেজ হোস্টেল ও আছে। হোস্টেল গুলো সাধারণত সিংগেল, ডাবল, ট্রিপল ও কোয়াডপোলেট হয়। রুমে সিটের সংখ্যা,হোস্টেলের অন্যান্য ফ্যাসিলিটি ও ছাত্রদের সংখ্যার উপর হোস্টেলের চার্জ ডিপেন্ড করে। তবে মোটামুটি ৪০০০-৭০০০ টাকার মধ্যে হোস্টেলে থাকার বন্দোবস্ত হয়ে যায়।


এবার আসা যাক খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারেঃ
প্রতিটা হোস্টেলেরই কমবেশি নিজস্ব কিচেন আর বাবুর্চি আছে। তাই ছাত্রদের কে কখনো বাজার বা রান্নার বিষয়ে ভাবতে হয় না। প্রতিবেলার খাবার দরজায় চলে আসে। কয়েকটি হোস্টেলে ‘সিটভাড়া-খাবার’ ফুল প্যাকেজ সিস্টেম, অর্থাৎ মাসে নির্দিষ্ট এমাউন্টের টাকা দিতেই হবে। আপনি হোস্টেলে কিছুদিন না থাকলে অথবা বন্ধে বাড়িতে গেলেও ভাড়া একই। আবার কিছু কিছু হোস্টেলে মিল অন-অফ করার ব্যবস্থা আছে। তবে সেটা আপনাদের কে চেক করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে আপনার খরচ তুলনামূলক কম হবে।
তিন বেলার খাবার ই চালু রেখে আমার মিলের খরচ মাসে কখনো ৩৫০০টাকার বেশি আসেনি। তবে বাজারের উপর এটা নির্ভরশীল। তাই এটা স্থির করে একটা ফিগার বলা শক্ত। তবে আশা করা যায় ৪০০০ এর বেশি আসবে না কখনো।

থাকা-খাওয়া বাদেও আরামবাগে আরো কিছু খরচ আছে। যেমন স্ন্যাকস, গ্রুমিং এক্সেসরিজ, স্টেশনারিজ টুলস, একাডেমিক এলিমেন্টস ও মোবাইল রিচার্জ। এর মধ্যে বছরের প্রথমেই আপনার সবচেয়ে বড় খরচ টা যাবে বই কেনায়৷ বিশেষ করে সায়েন্সের ছাত্রদের। তাছাড়া সারা বছর টুকটাক বই পুস্তক কেনা লাগে বৈকি। এ বাদেও অনেকে কলেজের পাশাপাশি প্রাইভেট টিউশন ও কোচিং ও জয়েন করে। সেখানকার জন্য আবার বাড়তি খরচ। তবে নটরডেম কখনোই এগুলোতে উৎসাহিত করে না। সাধারণত ছাত্ররা একটু মনোযোগী ও আগ্রহী হলে ক্লাসে ও ক্লাসের বাইরে কলেজ টাইমে যে কোন শিক্ষকের সাহায্য নিতে পারে তাদের একাডেমিক হেল্পের জন্য৷ শিক্ষকগণ ও ভিষণ খুশি হন এতে। এছাড়া একজন ছেলের হাত-খরচ এর টাকা মিলিয়ে মোটামুটি ১০-১২ হাজার টাকার মধ্যে এক মাস ভালো ভাবে আরামবাগের হোস্টেল খরচ ও কলেজ ফিজ দিয়ে চলা যায়। খরচ কম করতে চাইলে আরো অনেক ভাবেই কম করা যায়। সেটা আরামবাগে চলতে চলতেই শিখে যাবেন।

এবার কিছু কুইক টিপস দিয়ে রাখি-
★কলেজে চান্স পাওয়ার সাথে সাথেই কেউ বই কিনবেন না। টিচার ক্লাসে বলে দিবেন যে কোন বই কিনতে হবে। তবে কেউ এডভান্স শুরু করতে চাইলে সেটা ভিন্ন কথা।
★ঢাকার বাইরে থেকে যারা চান্স পাবেন এবং যারা হোস্টেলে থেকে ক্লাস করবেন, তারা রেজাল্ট রিলিজ হবার পরপর ই হোস্টেল বুকিং বা সেটেল করে ফেলবেন। কারণ যতো দেরি করবেন, তত ভাল হোস্টেলে ভাল সিট পাওয়ার পসিবিলিটিস কমে যাবে। আমাদের গ্রুপে আমরা আরামবাগ-ফকিরেরপুল এলাকার মানসম্মত কিছু হোস্টেলের কন্টাক্ট দিয়ে দেবো৷ আপনারা চাইলে যোগাযোগ করে নিতে পারেন।
★কলেজের বাইরে, সবচেয়ে বড় সময়টা একটা স্টুডেন্টের কাটে হোস্টেলে৷ তাই ভালো হোস্টেল ও এর পরিবেশ নিয়ে আগেই নিশ্চিত হয়ে নেবেন। শুনতে খারাপ লাগলেও এটা সত্য যে নটরডেমে পড়া সব ছাত্রই হীরের টুকরো নয়। তাই হোস্টেলে থেকে আপনার বখে যাওয়ার সম্ভবনা থেকেই যায়৷

★কোন হোস্টেল বুক করার আগে তাদের সকল সুযোগ সুবিধা ও নিয়মকানুন পড়ে নেবেন। আরামবাগের কিছু হোস্টেল নিয়মের ব্যাপারে নটরডেমের থেকেও এক কাঠি বেশি সরেস।

★হোস্টেলে থাকা মানে নিজের দায়িত্ব নিজে নেওয়া। এখানে আপনাকে গাইড করার মতো কেউ থাকবে না। হোস্টেলের প্রথম মাস শেষেই আপনি আপনার ভেতর বড় হয়ে হয়ে পরিপক্ক আরেকজন ‘আপনি’ কে বুঝতে পারবেন।
★হোস্টেল লাইফে খরচ করতে চাইলে খাতের অভাব হবে না৷ তবে প্রতিটা টাকা খরচ করার আগে এটা ভেবে নিবেন যে আপনি আপনার বাবা-মায়ের দেওয়া পয়সার সঠিক ব্যবহার করছেন তো?আর কম করতে চাইলে একটু ইচ্ছেই যথেষ্ট।
★কলেজ লাইফে আপনাকে ডিসট্রাক্টেড করার জন্য স্মার্ট ফোন, যে কোন নেশা, ঘনিষ্ঠ মেয়ে বন্ধু, বাজে খরচের অভ্যাস ইত্যাদি যথেষ্ট। আর হোস্টেল লাইফে এগুলো ফাঁদের কোন কমতি নেই। তাই নিজের ভালো বোঝা শিখুন।

আপনাদের নতুন জীবনের জন্য অনেক শুভ কামনা। ভালো থাকবেন ৷

ভর্তি সংক্রান্ত যেকোনো প্রয়োজনে Damian Dreamers

Scroll to Top