নটর ডেমে চান্স পাওনি? তো কী হয়েছে ভাইয়া?
মো: ইউছুপ
নটরডেম কলেজ, ব্যাচ-২২
নটরডেমে পরীক্ষা দিয়েছো!কেউ চান্স পেয়েছো ,কেউ পাওনি । এখন চলো দেখে নেই কে কী করবে
যারা চান্স পাও নি:
আজ রিটেন পরীক্ষার রেজাল্ট প্রকাশিত হলো। যাদের হয়ে গেছে তারা ব্যস্ত ভাইভার প্রস্ততি নিয়ে। যাদের হয়নি তারা ডিপ্রেসড্ হয়ে মনে মনে ভাবছো হয়তো তুমি ব্যর্থ, তোমার দ্বারা ভালো কিছু হবে না,এতো চেষ্টা করেও কেন তোমার হলো না এরকম আরো নানা ধরনের প্রশ্ন তোমাকে ঘিরে থাকবে এই কয়দিন। তবে তোমার জন্য একটা আশার বাণীও আছে জানো? নটরডেমে পরীক্ষা দিতে পেরেছো এটাই তোমার জন্য আশার বাণী। তুমি মাত্র এসএসসি পাশ করে এতো বড় একটা পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছো মানেই তুমি প্রতিযোগিতায় এগিয়ে আছো। তুমি বুঝে গেছো এখনই এতো প্রতিযোগিতা হলে সামনে ইউনিভার্সিটি ভর্তি পরীক্ষায় না জানি আরো কত বেশি প্রতিযোগিতা হবে।
চান্স না পাওয়ার তীব্র কষ্টকে শক্তিতে রুপান্তর করে পড়াশোনা শুরু করবে ভালো মতো। যে চান্স পেয়েছো আর যে পাও নি সবাইকে ভার্সিটি ভর্তি পরীক্ষায় বসতে হবে। সেখানে সবাই সমান। এখন যে নটরডেমে চান্স পাও নি সে নিজেকে ভয়ে ভয়ে আরো শক্তিশালী করে প্রস্তত করবে ভার্সিটির জন্য। আর যে চান্স পেয়েছে সে হয়তো আনন্দে আনন্দে নিজের ওভার কনফিডেন্স নিয়ে পড়ে থাকবে। এই ওভার কনফিডেন্সই তাকে ব্যর্থ করে দিতে পারে।সুতরাং এখন থেকে লেগে পড়ো তোমার গন্তব্যে। নটরডেম তোমার শেষ লক্ষ্য না। মাত্র তোমার যাত্রা শুরু। একটা প্রবাদ আছে “শুরুটা খারাপ হওয়া মানেই আপনি সফল হবেন”।
খারাপ করেছো, সামনে চেষ্টা করবে আরো ভালো করার, এই হেরে যাওয়াই তোমার জীবনের অনুপ্রেরণা হবে। তুমি এটাকে মনে রেখে আগামী ১৮ মাস নিরলস পরিশ্রম করো সফলতা আসবেই। তখন হয়তো দেখবে তোমার অনেক নটরডেমের বন্ধু তেমন ভালো কোথাও চান্স হয় নি।
আর একটা কথা, অনেকেই নটরডেমে চান্স না পেলে নটরডেমকে আর দেখতে পারে না। নটরডেমের বিরোধিতা করে। বিশ্বাস করো এসব দিয়ে কলেজের কিছু যায় আসে না। তোমার ভাগ্যে ছিলো না তাই চান্স হয় নি। কলেজ তোমার সাথে কোন দুই নাম্বারি করে নাই। এসব করলে বরং তুমি ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এসব না করে নটরডেমের বন্ধুদের সাথে মিশবা। মিশে তাদের নোটস, ক্লাসে কি পড়ায়, সে কেমনভাবে পড়ে ইত্যাদি সাহায্য নিয়ো। তাহলে তোমার জন্যই ভালো হবে।
নিজের উপর বিশ্বাস রাখো? দেখবে তুমিই সফল হবে৷ তোমার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা।
যারা চান্স পেয়েছো:
তোমাদের মধ্যে আবার তিন রকমের ছাত্র তৈরি হয়ে যাবে চান্স পাওয়ার আনন্দে।
যারা চান্স পেয়ে যাবা তারা প্রতিদিন এক দুইটা করে কলেজ নিয়ে পোস্ট দিবা, নতুন নতুন বন্ধু হবে, অনেকের আবার মেয়ে বন্ধু হবে অন্য কলেজের। নটরডেমের ছেলেদের প্রতি মেয়েদের আলাদা একটা আকর্ষণ থাকে বন্ধু বানানোর। বন্ধু থেকে চলে যাবে অন্যকিছুতে, তাদের লাইফ এখানেই উচ্ছন্নে গেছে।
আবার অনেকেই আছে কলেজ নিয়ে অতি উৎসাহী হয়েই দিন পার করবে আর শো-অপ করবে। অন্য কলেজের বন্ধুদের তার চোখেই লাগবে না। সে মহা পণ্ডিত হয়ে যাবে, কোন কলেজের সাথে কোন কলেজ মারামারি করে এসবের খবর রাখবে, রাজনীতিতে এক্টিভ থাকবে, এভাবে শো-অপ করতে করতে ৩/৪ মাস পার করার পর যখন দেখবে সেট আপ-১ পরীক্ষার রুটিন! ব্যস, সে হতাশ….!
আরেকদল থাকবে যারা চান্স পাওয়ার পর পরই নিজেকে আরো শক্তভাবে তৈরি করবে আগামীর জন্য। তার থাকবে না কোন ফেইসবুক আইডি, কোন বাজে দিকে মনোযোগ দিবে না, কে কি করলো এসব দেখবে না, সর্বদা নিজের পড়াশোনা এবং দায়ীত্বের প্রতি মনোযোগী হবে, ধর্মের প্রতি মনোযোগী হবে, শো-অপ করবে না, চুপ মেরে পড়ে থাকবে ও তার ক্রিয়েটিভিটি লুকিয়ে রাখবে। একটা সময় এরা কলেজ থেকে ভালো পজিশন নিয়ে বের হবে; দিনশেষে এরাই ভার্সিটিগুলোতে টপ পজিশনে থাকবে।
সুতরাং তোমাদের কাছে প্রত্যাশা করবো তোমরা তৃতীয় দলের মানুষ হও। লাইফে ভালো কিছু করতে পারবে। তোমার দ্বারা তোমার পরিবার, সমাজ, এবং দেশের উন্নতি হবে। তোমার বাবা যাতে গর্বের সাথে তোমার পরিচয় দিতে পারে।
নটরডেমে পরে সবাই ভালো হয় না। মনে আছে? আবরার ফাহাদের খুনিরা কিন্তু তার নটরডেমের বন্ধুই ছিলো। তাই, প্রিয় নবাগত জুনিয়র, হতে পারে তোমার এলাকা থেকে তুমিই একমাত্র ছাত্র যে নটরডেমে চান্স পেয়েছো। তুমি তোমার পরিবারের প্রতিনিধিত্ব করছো, তোমার সমাজের প্রতিনিধিত্ব করছো। তুমি ভালো করলে তোমার পরিবার ও সমাজ গর্ব করবে তোমাকে নিয়ে। আর খারাপ করলেও তারাই কষ্ট পাবে। লজ্জায় বলবে না কাউকে তুমি তার এলাকার বা পরিবারের। সিদ্ধান্ত তোমার হাতে।
তোমরা তোমাদের স্বপ্নের চেয়েও বড় হও।
তোমাদেরকে অভিনন্দন এবং শুভকামনা।
মো: ইউছুপ
Ex: নটরডেম কলেজ, ব্যাচ-২২
Present: Jagannath University, Dhaka
genius